Sunday, April 18, 2021

হকির নির্বাচনে এত তোলপাড়!

 


বাংলাদেশের হকি নিয়ে হঠাৎ চারদিকে শুরু হয়েছে তোলপাড়। হকি ফেডারেশন অফিসের আশপাশে তুমুল ভিড়। কর্মকর্তা আর সাবেক খেলোয়াড়দের সঙ্গে রয়েছেন তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। আর রয়েছেন উৎসুক জনতা। না, বাংলাদেশের হকি কোনো সাফল্য লাভ করেনি কিংবা আন্তর্জাতিক পদক লাভেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। তাহলে ঘটনা কী? হকি ফেডারেশনের আসন্ন নির্বাচন। হকির নির্বাচন নিয়ে আগেও এমন তোড়জোড় লক্ষ করা গেছে। এমন হইচই আর উত্তেজনার ছিটেফোঁটাও যদি খেলাটির মান উন্নয়নে থাকত, তাহলে বাংলাদেশ বিশ্ব হকির সম্মানজনক অবস্থায় জায়গা করে নিতে সক্ষম হতো।

জানা গেছে, সমঝোতার বদলে নির্বাচনের মাধ্যমেই হকির নতুন কমিটি চায় দুই পক্ষ। শেষদিন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক পদের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুস সাদেক ও একেএম মমিনুল হক সাঈদ। ২৮টি পদের বিপরীতে মনোনয়ন জমা পড়েছে ৬৮টি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৪ এপ্রিল। আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৮ এপ্রিল। প্রথমে শোনা গিয়েছিল সমঝোতার ভিত্তিতে হবে হকি ফেডারেশনের এই নির্বাচন। দুই পক্ষ কয়েক দফা সভা করেছে এ নিয়ে।

তবে শেষ দিন দুই পক্ষই আলাদা আলাদাভাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় সেই সম্ভাবনা মুছে গেছে। এখন আর সমঝোতার সুযোগ নেই- জানান সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আবদুস সাদেক। অপরদিকে আনুষ্ঠানিক কোনো সমঝোতার প্রস্তাব আসেনি বলে তথ্য দিলেন অন্য প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মমিনুল হক সাঈদ।

অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক মহানগর হকি ক্লাব সমর্থিত পরিষদের ব্যানারে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ওই প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে আবদুস সাদেক, সহ-সভাপতি পদে সাজেদ এ এ আদেলসহ পাঁচজন ও অন্যান্য পদ মিলিয়ে ২৮ পদের বিপরীতে ৩০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সমঝোতার নির্বাচন না হলেও সবাই মিলে হকির সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া আবদুস সাদেক। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষ থেকে কাউন্সিলর হওয়া মমিনুল হক সাঈদ। তাকে সমর্থন দিলেও ঊষা ক্রীড়াচক্রের আবদুর রশিদ শিকদার একই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন প্যানেল ঘোষণা করেছেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবদুস সাদেক। বিপরীতে মনোনয়ন জমা দিলেও পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ৩ এপ্রিল ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাঈদ। যদিও এখনই বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ ও মহানগর হকি ক্লাবগুলোর সমর্থনে নিরঙ্কুশ জয়ের আত্মবিশ্বাস সাদেকের কণ্ঠে। তার প্যানেলে সহ-সভাপতির পদে সাজেদ আদেল, মাহফুজুর রহমান ও ইউসুফ আলীর সঙ্গে নতুন মুখ মোস্তবা জামান ও জাকি আহমেদ। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে থাকছেন মাহবুব এহসান রানা ও মোহাম্মদ ইউসুফ। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের নির্বাচনে সব সময়ই বিতর্ক আর নতুন সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তার প্রধান কারণ, বিশ্ব হকিতে বর্তমানে বাংলাদেশের কোনো অবস্থান নেই বলা চলে। এক সময়ের সম্ভাবনাময় হকিকে ‘গলা টিপে হত্যা’ করা হয়েছে। সরাসরি এর জন্য দায়ী হকির কর্মকর্তারা। যেই বাংলাদেশ তিন দশক আগেও বিশ্বের সেরা দলটির বিরুদ্ধে দারুণ লড়াই করে মাত্র এক গোলে হেরেছিল দুর্ভাগ্যক্রমে, সেই বাংলাদেশকে আজ যদি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের মুখোমুখি করা হয়, তাহলে হয়তো গোল হজমের বিশ্বরেকর্ড করতে পারে লাল-সবুজের দলটি। অথচ হকি ফেডারেশনের নির্বাচন দেখলে মনে হবে- না জানি খেলাটিতে কত উপরে উঠেছে বাংলাদেশ।

বিশ্ব হকির র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩৪ নম্বরে। যেখানে এশিয়ার দল ভারত রয়েছে পঞ্চম স্থানে। আর পাকিস্তান দ্বাদশ, মালয়েশিয়া ত্রয়োদশ, চীন চতুর্দশ, দক্ষিণ কোরিয়া সপ্তদশ, জাপান অষ্টাদশ স্থানে রয়েছে। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় এশিয়া কাপ হকিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধের শেষের দিকের একমাত্র গোলে পরাজিত হয়েছিল তৎকালীন বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের বিপক্ষে। দেশজুড়ে হকির জোয়ার সৃষ্টি হয়। কিন্তু কর্মকর্তারা সেই অবস্থা ধরে না রেখে নিজেদের আখের গোছাতে তৎপর ছিলেন বলেই হকিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আজ অবধি সেই অবস্থাই রয়েছে।

এক সময়ের বিশ্বসেরা দল ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া এখন বিশ্বকাপ কিংবা অলিম্পিকে টিকে আছে কোনোমতে। সেই সব দলের সঙ্গে বাংলাদেশ ম্যাচে হালি হালি গোল হজম করছে। হকির উন্নতির দিকে কর্মকর্তাদের মোটেও ভ্রূক্ষেপ নেই। তাদের নজর শুধু নির্বাচনে। নির্বাচন অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু যেখানে হকির এমন বেহাল দশা, সেখানে কি জাঁকজমকপূর্ণ নির্বাচন শোভা পায়- প্রশ্ন সেটাই।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: