Showing posts with label প্রবাস. Show all posts
Showing posts with label প্রবাস. Show all posts

Sunday, April 18, 2021

শ্রমবাজারে ফের সক্রিয় দালালচক্র

শ্রমবাজারে ফের সক্রিয় দালালচক্র

 


শিগগিরই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলতে যাচ্ছে এমন খবরে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালালচক্র। বিদেশগামী কর্মীদের কাছ থেকে তারা আগাম পাসপোর্ট ও অগ্রিম টাকা তোলা শুরু করেছে। মালয়েশিয়াতেও বিভিন্ন কোম্পানির ডিমান্ড লেটার সংগ্রহে সক্রিয় রয়েছে চক্রটি। ইতোমধ্যে দেশে ও মালয়েশিয়ায় প্রায় ডজনখানিক দালালকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মালয়েশিয়া সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের নতুন শ্রমবাজার খোলার লক্ষ্যে সম্প্রতি দুদেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার ব্যাপারে উভয় দেশ একমত হলেও সকল রিক্রুটিং এজেন্সি নাকি সীমিত সংখ্যক এজেন্সি কর্মী পাঠানোর অনুমতি পাবে সে বিষয়টির মীমাংসা হয়নি। তবে এ ব্যাপারে শিগগিরই দুদেশ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, কোনো দেশের শ্রমবাজার খোলার ব্যাপারে ঘোষণা হলেই দালালদের পাসপোর্ট ও টাকা তোলার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধে বায়রার গত কমিটি এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদেশগামী কর্মীদের ডেটাবেজ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কী প্রক্রিয়ায় ডেটাবেজ করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এটি হলে এই খাতে দালাল নির্ভরতা থাকবে না। এছাড়া শ্রমবাজার খোলার ঘোষণার পাশাপাশি যদি বলে দেওয়া হয়, কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত অর্থ লেনদেন করা যাবে না এবং ডেটাবেজ ছাড়া কেউ বিদেশ যেতে পারবে না। তাহলে খানিকটা দালাল মুক্ত করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেও সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে।  

এদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বরাবরই আকর্ষণীয় হওয়ায় এই সেক্টরের ব্যবসায়ী ও দালালচক্রের তৎপরতা সব সময়ই বেশি ছিল। কারণ দেশটিতে কর্মীদের আয় যেমন বেশি তেমনি কর্মপরিবেশও আরামদায়ক। এ ছাড়া কর্মী প্রতি মোট মোটা অঙ্কের কমিশনও পান এক শ্রেণির কর্মকর্তারা। এবারো নতুন শ্রমবাজার খোলার সংবাদে দুদেশের দালালচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কর্মী আনার ডিমান্ড লেটার সংগ্রহে মাঠে নেমেছে। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গত মাসে দেশটির পুলিশ অন্তত দশজন দালালকে আটক করেছে। দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে দুদেশের প্রতিশ্রুতি থাকলেও আইনি দুর্বলতার কারণে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রেপ্তারের অল্প সময়ের মধ্যেই তারা আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিনে বেরিয়ে যান। জামিনে বেরিয়ে ফের তারা একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ফলে দালালরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

রাজধানীর বনানীর একটি রিক্রটিং এজেন্সি থেকে গত সপ্তাহে মো. জামিল হোসাইন (৫১) নামে এক দালালকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব)। র্যাব জানায়,  দীর্ঘদিন ধরে জামিল হোসাইন রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে দেশি-বিদেশি দালালদের সহযোগিতায় বিভিন্ন দেশের ভুয়া ডিমান্ড লেটার ও ভুয়া বিজ্ঞাপন তৈরি করে তা লোকজনকে দেখিয়ে পোল্যান্ড, জাপান, মাল্টা, রোমানিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নাম করে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। ২০১৩ সালেও জামিল হোসাইন মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালে মানব পাচারের অভিযোগে মালয়েশিয়ার পুলিশ গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। তারপরও সে বিদেশগামী কর্মীদের প্রতারণার পথ থেকে সরেনি।

অভিযোগে জানা যায়, প্রতারণার শুরুতে জামিল হোসাইন ভিকটিমদেরকে ভুয়া ডিমান্ড লেটার দেখিয়ে তাদের নিকট হতে পাসপোর্ট ও নগদ টাকা নিয়ে নেয়। এক সময় তাদের বিদেশে না পাঠিয়ে এবং টাকা না দিয়ে সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করে বলে র্যাব সদস্যদের নিকট স্বীকার করে। তার অভিযোগে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে জাহিদ হাসানকে (২৪) পোল্যান্ড পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে ভুয়া ডিমান্ড লেটার ও ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞাপন দেখিয়ে নগদ ও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঁচ লক্ষ সত্তর হাজার টাকা এবং লক্ষ্মীপুরের মফিজুর রহমানের ছেলে ফরিদ আহম্মেদের নিকট হতে তিন লাখ টাকা নেয়। এ ছাড়া বাগেরহাটের হাছিব হাওলাদারের নিকট তিন লাখ টাকা, গুলশান নর্দার কামরুল হাসানের নিকট হতে পাঁচ লাখ ত্রিশ হাজার টাকা, নারায়ণগঞ্জের ইউসুফ আলীর নিকট হতে চার লাখ টাকা আত্মসাৎ করার কথাও স্বীকার করে। জামিল হোসাইন অনেকের কাছ থেকে এভাবে টাকা ও পাসপোর্ট নিয়ে নিজ হেফাজতে রেখেছে। ভুক্তভোগীরা বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ফেরত দেয়নি। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে প্রতারণার অভিযোগে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ জামিল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফেরত পাঠায়।

মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার হারানোর পেছনে বাংলাদেশ সরকারেরও উদাসীনতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিদেশে পাঠানো যায়, তাহলে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশিদের। বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াজুড়ে রয়েছে বাংলাদেশি দালালচক্রের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। প্রভাবশালীদের কারণে বরাবরই অধরাই থেকে যায় এ চক্রের গডফাদাররা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বাস্তবায়ন ও প্রবাসী দালালচক্রের কারণে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। 

হ্যাকিংয়ের ফাঁদে প্রবাসীরা

হ্যাকিংয়ের ফাঁদে প্রবাসীরা

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  হ্যাকিং বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে প্রবাসীরা ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিংয়ের ফাঁদে পড়ে ভুক্তভোগী হচ্ছেন বেশি। এসব প্রবাসীর বিভিন্ন অফিস বা কোম্পানি থেকে লটারি বিজয়ী হয়েছে অথবা সমস্যার কথা বলে ফোন করে মোবাইলের মেসেজের পাসওয়ার্ড নম্বর চাওয়া হয়। আবার বিভিন্ন গ্রুপ নম্বর অ্যাড করে বারবার গ্রুপে ফোন করে বিরক্ত করা হয় বা গ্রুপে আপত্তিকর ছবি ভিডিও পাঠানো হয়। গ্রুপ না থাকতে চাইলেও বারবার গ্রুপে যুক্ত করা হয়।

নব্বই দশকে যখন ইন্টারনেট বা তথ্য প্রযুক্তি এতটা প্রচলন ছিল না, সেই সময়ে কাগজে লিখে প্রিয়জনকে চিঠি বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখে ডাকযোগে পাঠাতে হতো। বিদেশ থেকে প্রবাসীরা লোক মারফত ছাড়া ডাকযোগে চিঠি পাঠালে সেটা হাতে পেতে ১৫ দিন থেকে ১ মাস সময় লাগত। বর্তমানে উন্নত তথ্য প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট সেবা সহজ হওয়ায় সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাপস ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, স্কাইপসহ অনেক অ্যাপস। সহজে মোবাইলে ইমো চালু করা এবং নম্বর অ্যাড করতে ঝামেলা কম হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ ইমো ব্যবহার করে। এক মোবাইল নম্বর দিয়ে একাধিক মোবাইলে ইমো চালু বা ব্যবহার করা যায়। যার কারণে কিছু কুচক্রী মহল সমাজে বা কমিউনিটির মধ্যে পরিচিত ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে থাকে। অনেকেই যারা গ্রুপ থেকে কীভাবে সরে যেতে হয় জানেন না। এই রকম ইমো গ্রুপে হ্যাকিংকারী চক্রের সদস্যরা গ্রুপ বাদ দেওয়ার কথা বলে কৌশলে টার্গেট করা ব্যক্তির মোবাইলের মেসেজের নম্বরটা দিতে বলে। এভাবে ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিংয়ে ঝুঁকি বেশি। আবার অপরিচিত কাউকে মোবাইল দিলে অথবা দেখা যায় অনেকেই বেখয়ালি বা কাজের চাপে মোবাইলে এক স্থানে রেখে ব্যস্ত হয়ে যান অন্য কাজে। আর এই সুযোগে কুচক্রী হ্যাকার মোবাইলের মেসেজের পিন পাসওয়ার্ড নিয়ে ইমো হ্যাক করে। এরপর হ্যাকাররা পরিচিত-অপরিচিত নম্বরে বিভিন্ন অজুহাত ও বিপদের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়।

 


ইমো হ্যাকারের শিকার কুয়েত প্রবাসী আবদুস সাত্তারের মোবাইলে ফোন আসে হঠাৎ। পরিচিত মনে করে এই প্রবাসী নিজের মোবাইলের মেসেজে আসা পিন পাসওয়ার্ড বলে দেন। এরপর নিজ কাজে কর্মে ব্যস্ত হয়ে যান। এই ফাঁকে ইমো হ্যাক করে তার এক বন্ধু জসিম উদ্দিনকে ফোন করে দেশে জরুরি ৫ হাজার টাকা বিকাশ করতে বলেন ওই হ্যাকার। জসিম টাকা পাঠিয়ে দেয় সেই নম্বরে। হ্যাকার পরে আবার অন্য আরেক নম্বরে বিকাশে টাকা পাঠাতে বললে তখন জসিমের সন্দেহ হয়। সঙ্গে সঙ্গে সাত্তারকে বিষয়টা জানালে সে বলে, এই ব্যাপারে সে কিছুই জানেন না।

সাত্তার তখন বন্ধুকে জানায়, কিছুক্ষণ আগে তাকে একটা নম্বর থেকে ফোন করে মোবাইলের মেসেজের নম্বর চাইল। পরে বুঝতে পারেন তার ইমো হ্যাক হয়েছে। প্রতিদিন এভাবে প্রবাসীদের ফোন আসে অনেক সময় বলে লটারিতে বিজয়ী হয়েছে ইত্যাদি বলে ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকারের ফাঁদে পড়েন।

ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিং থেকে বাঁচতে সর্তক হতে হবে। অপরিচিত কাউকে মোবাইল দেওয়া যাবে না। অপরিচিত কাউকে কোনো অজুহাতে নিজের মোবাইলের মেসেজের পিন বা পাসওয়ার্ড জানতে চাইলে না দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।