Sunday, April 18, 2021

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কুষ্টিয়া সুগার মিল

 


কুষ্টিয়া শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে জগতি এলাকায় ১৯৬১ সালে শিল্প প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৬৫-৬৬ মৌসুম থেকে কারখানায় চিনি উৎপাদন শুরু হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার চিনিকলটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে। বড় অঙ্কের লোকসান আর দেনার দায় নিয়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ৬০ বছরের পুরোনো কুষ্টিয়া সুগার মিল।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির জায়গায় সরকার অন্য কিছু করার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাকিবুর রহমান খান। তিনি বলেন, এই মিল গুটিয়ে আনা হচ্ছে। সরকার এটিকে আর চিনিকল হিসেবে চালাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তবে এই মিল এরিয়াসহ মোট ২১৬ একর জায়গায় অন্য কিছু করার চিন্তা করা হচ্ছে। এখানে যাতে ১০ হাজার মানুষ কাজ করতে পারে, সে ধরনের কারখানা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে চিনিকলের জায়গায় কী করা হবে, তা ঠিক করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে ভালো বিনিয়োগকারী খোঁজা হচ্ছে।

মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) খোরশেদ আলম জানান, আখ মাড়াই বন্ধ থাকা চিনিকলটি ৫৪৫ কোটি টাকা লোকসানে আছে বলে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯-২০ মৌসুমেও ৬১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। চলতি মৌসুম (২০২০-২১) শেষে লোকসানের অঙ্কে কমপক্ষে আরও ৬০ কোটি টাকা যোগ হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, মজুরি এবং চাষিদের পাওনা ও বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের বকেয়াসহ দেনার দায় জমেছে ২৪ কোটি টাকার। বর্তমানে কর্মকর্তাদের চার মাসের আর শ্রমিক-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন-ভাতা মিলিয়ে তিন কোটি ১৬ লাখ টাকা বকেয়া আছে। এ ছাড়া চাষিদের দেড় কোটি, মালামাল ক্রয়ের চার কোটি ৪০ লাখ ও অবসরপ্রাপ্তদের বকেয়া আছে সাড়ে ৮ কোটি টাকা। শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়ার কিছু অংশ পরিশোধ করা হয়েছে।

গত বছরের ২ ডিসেম্বর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে কুষ্টিয়া চিনিকলসহ ছয়টি মিলের আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। এর আগে থেকেই আন্দোলনে ছিলেন এখানকার শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিরা। সরকার ২০২০-২১ মৌসুমের আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে এখানকার আখ চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ ও ফরিদপুর চিনিকলে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়।

কুষ্টিয়া চিনিকলে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। গেটের নিরাপত্তাপ্রহরী ও রেজিস্টারে নাম লিপিবদ্ধকারী কর্মচারীকে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। গেটের বাইরে বা ভেতরে মানুষের আনাগোনা ছিল না। মিলে কাজ নাই মজুরি নাই (কানামনা) ভিত্তিতে কাজ করতেন ১৩৫ জন শ্রমিক। তারাই মূলত কর্মসংকটে পড়েছেন। আন্দোলনেও আছেন তারা। এসব শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান। মিলের এখন স্থায়ী কর্মী ৩৯৬ জন। এর মধ্যে ২৩ জন কর্মকর্তা। বাকিরা কর্মচারী ও শ্রমিক। মিলটি চালু ও পাওনা টাকার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন আখচাষি ও শ্রমিকরা। তারা কুষ্টিয়া সুগার মিলের ফটকে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ করেন। মিল বন্ধের প্রতিবাদে ঝাড়ু হাতে বিক্ষোভ করতেও দেখা গেছে। শ্রমিক-চাষি সমাবেশ, মানববন্ধনও করেছেন, দিয়েছেন স্মারকলিপিও।

চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান বলেন, চিনিকলে জমে থাকা অনেক চিনিই গত কয়েক মাসে বিক্রি হয়েছে। গত ডিসেম্বরে চিনিকলে মাড়াই বন্ধের সময় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন চিনি ছিল অবিক্রীত। এখন সেখানে রয়েছে ৭৩৭.৫৫ মেট্রিক টন চিনি। এর অর্থমূল্য প্রায় ৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। কলে চিটাগুড় রয়েছে দুই হাজার ২০০ মেট্রিক টন, যার দাম প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এগুলো ডিসেম্বরের পর থেকে আর বিক্রি হয়নি।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: